Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

প্রাচীন ইতিহাস

 

 

মুন্সিগঞ্জের প্রাচীন বিক্রমপুর অঞ্চলে (বজ্রযোগিনী ইউনিয়ন) প্রাক-মধ্যযুগে মানববসতি ছিল। গবেষকদের ধারণা, এ মানববসতি প্রায় ৭০০ থেকে ১৩০০ বছরের পুরোনো। একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার সাম্প্রতিক প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় প্রাচীন এ বসতির সন্ধান পাওয়া যায়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে ওই গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। জানতে চাইলে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, প্রত্নতাত্ত্বিক খননে মাটির নিচে একটি ইটের তৈরি দেয়াল পাওয়া গেছে। ইটের আকৃতি দেখে ধারণা করা যায়, এটি প্রাক-মধ্যযুগীয় (৭০০-১৩০০ শতক) স্থাপনার অংশবিশেষ। কার্বন-১৪ ডেটিং করে এই স্থাপনার সুনির্দিষ্ট বয়স নির্ধারণ করা হবে বলে তিনি জানান। এ ছাড়া খননস্থান-সংলগ্ন সুখবাসপুর থেকে একটি পোড়ামাটির ভাস্কর্যের অংশবিশেষ পাওয়া যায়।

গবেষকদের ধারণা, বজ্রযোগিনী গ্রামের উৎখনন খাদে পাথর ভেঙে ভাস্কর্য তৈরি করা হতো। এই খাদে পাওয়া পাথরগুলো চমৎকারভাবে খাঁজ-কাটা। এগুলোর গায়ে বিভিন্ন ধরনের অলংকরণ পাওয়া গেছে। পাথর ও ইটের অনিয়মিত রূপ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, এর আশপাশে কোনো নির্মাণকেন্দ্র থাকতে পারে। এ ছাড়া উৎখননে স্থাপত্যিক ধ্বংসাবশেষ, মৃৎপাত্রের টুকরো, পাথরের নিদর্শনের ভেঙে যাওয়া টুকরো, কিছু ধাতব নিদর্শন পাওয়া গেছে।
ঐতিহাসিক ভিত্তি: বর্তমানের মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রাচীন আমল থেকেই রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ভারত ও বাংলাদেশজুড়ে বিভিন্ন সময় চালানো প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তাম্রলিপির ভিত্তিতে বলা হয়, অঞ্চলটি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
মুন্সিগঞ্জে (সাবেক বিক্রমপুর) চন্দ্র (সময়কাল ৯০০-১০৫০ খ্রি.), বর্ম (১০৮০-১১৫০ খ্রি.) এবং সেন (১০৯৫-১১৬০ খ্রি.) রাজবংশের রাজধানী ছিল। চন্দ্র রাজবংশের কেদারপুর ও রামপাল থেকে পাওয়া কয়েক ধরনের তাম্রলিপি, বর্ম রাজবংশের বজ্রযোগিনী ও সেন রাজবংশের ব্যারাকপুর তাম্রলিপিতে বিক্রমপুরকে ‘জয়স্কন্ধাভার’ (বিজয় ক্যাম্প) বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় জাদুঘর, রাজশাহীর বরেন্দ্র জাদুঘরসহ ভারতের কয়েকটি জাদুঘর পরিদর্শন করে গবেষকেরা বিক্রমপুর থেকে উদ্ধার করা ৭৯টি ভাস্কর্যের তালিকা করেছেন। পাথর, পোড়ামাটি ও বিভিন্ন ধাতু (যেমন রুপা) দিয়ে তৈরি এসব ভাস্কর্য বিক্রমপুর থেকে উদ্ধার করা হয়। এ জন্য গবেষকদের ধারণা, এই অঞ্চলে প্রাক-মধ্যযুগীয় বসতি ছিল।
গুপ্ত ও পাল রাজত্বকালে বিক্রমপুরে কোনো মানববসতি-সম্পর্কিত প্রত্যক্ষ প্রমাণ এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন তাম্রলিপিতে চন্দ্র, বর্মণ ও সেন রাজবংশের আধিপত্য বিস্তারের প্রমাণ পাওয়া গেলেও এই প্রথম ওই সময়কালের কোনো স্থাপত্যিক নিদর্শনের অংশবিশেষের সন্ধান মিলল।